বিনা টিকিটেই ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ!

উদয়ন ট্রেনে সিলেট থেকে চট্টগ্রামে যাবেন মোহিন ইস’লাম। সিলেট স্টেশনের কাউন্টারে এসে দেখেন টিকিট নেই। ট্রেন তখন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো। মোহিন এগিয়ে যান প্ল্যাটফর্মের দিকে। সেখানে এক রেলকর্মীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মিলে যায় সুযোগ। সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকের ঘটনা এটি।

মোহিন বলেন, ‘টিকিট পাইনি। তবে রেলকর্মী বলেছেন, তাকে ৫০০ টাকা দিলে সিটে বসিয়ে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম নিয়ে যাবেন।’ ওই কর্মীর মাধ্যমে আরেকজন যাত্রী যেতে পারবে কি না জানতে চাইলে মোহিন নিয়ে যান ট্রেনের গ বগির গেটের সামনে দাঁড়ানো ওই রেলকর্মীর কাছে। খাটো গড়নের ওই কর্মীর পরনে রেলের সাদা কস্টিউম। তবে বুকে নেমপ্লেট নেই। নিজের নামও বলতে রাজি হননি তিনি।

আরেকজন যাত্রী নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমা’র বরাদ্দের সব সিট ফিলাপ। আমি আর নিতে পারব না। আপনি অন্য কারও কাছে দেখেন।’ অন্য কার কাছে দেখব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ট্রেনের পাশ ধরে হাঁটতে থাকেন। সাদা পোশাক পরিহিত যাকে দেখবেন তার সঙ্গে কথা বলবেন।’

দুই বগি পেরোনর পরই পাওয়া গেল এ রকম একজনকে। তার গায়েও সাদা কস্টিউম এবং বুকে নেমপ্লেট নেই। তবে তিনি তার নাম বলেন রাসেল। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে মাহফুজ নামে আনসার সদস্যের সঙ্গে টাকা লেনদেন করছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম যেতে ইচ্ছুক যাত্রী পরিচয়ে রাসেলের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, যেতে পারবেন। তবে ৬০০ টাকা লাগবে।

কোন ধরনের সিটে করে নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণ সিটে বসতে পারবেন। ট্রেনের শোভন চেয়ারে সিলেট থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া ৩৭৫ টাকা। রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকেই টিকিট কিনেছেন শাহাদাত হোসেন। তবে তার কাছ থেকে দাম রেখেছে ৪০০ টাকা। কাউন্টারেই বেশি দাম কেন জানতে চাইলে শাহাদাত বলেন, ‘আমা’র কাছে ভাংতি ছিল না। তাদের কাছেও নাকি ভাংতি নাই। তাই ৪০০ টাকা রাখছে।’

তবে কাউন্টার থেকে নির্ধারিত মূল্যেই টিকিট কিনেছেন বলে জানিয়েছেন আনোয়ারুল ইস’লাম, আলমগীর কবির ও সাইফুল ইস’লাম। তারা যথাক্রমে মাইজগাঁও, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের যাত্রী। তবে ৩-৪ দিন আগে এসে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন আলমগীর ও সাইফুল। আর ৫ দিন আগে অনলাইনে টিকিট কিনেছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামগামী যাত্রী নিরোদ সরকার। এই ট্রেনেরই চট্টগ্রামগামী যাত্রী মিসবাহ উদ্দিন। তিনি কখনও কাউন্টার থেকে টিকিট কেনেন না। কেনেন বাইরে থেকে।

মিসবাহ বলেন, ‘কাউন্টার থেকে কেনা ঝামেলা। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে হয়। আবার বেশির ভাগ সময়ই টিকিট পাওয়া যায় না। তাই আমা’র একজন লোক আছে এখানে। তাকে আগে ফোন করে বলে দেই। সে আমা’র জন্য টিকিট রেখে দেয়। ৫০/১০০ টাকা বেশি নেয়।’ নিজের সেই লোকের নাম বলতে রাজি হননি মিসবাহ। বলেন, ‘আপনিও একটু হাঁটাহাঁটি করলে এদের পেয়ে যাবেন। রেলস্টেশনের দোকান ও আনসারদের সঙ্গে কথা বলে দেখেন।’

উদয়ন ট্রেন সিলেট স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা সাড়ে ৮টায়। তার মিনিটখানেক আগে কাউন্টারে গিয়ে টিকিট চাইলে টিকিট নেই বলে জানানো হয়। জরুরি প্রয়োজনে যাওয়া প্রয়োজন বললে কাউন্টারে বসা বিক্রয়কর্মী বলেন, দৌড়ে ট্রেনের কাছে যান। ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

এসব বিষয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মুহাম্ম’দ নুরুল ইস’লাম বলেন, ‘এখন কোনো কালোবাজারি নেই। টিকিট কাউন্টারেই পাওয়া যায়। অনেক যাত্রী টিকিট না করেই যেতে চান। তাদের কেউ কেউ অ’নৈতিক সুবিধা দিতে পারে। তবে এমন অ’ভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’

About admin

Check Also

২০০ বছর বয়স, এখনো কয়েকশো ফল দেয় এই কাঁঠাল গাছ

পানরুটি শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরেই মালিগামপাট্টু নামক গ্রামে রয়েছে একটি ঐতিহ্যবাহী কাঁঠাল গাছ। গাছটির বয়স …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *