মোটা টাকা স্যালারি ছেড়ে ৪ বন্ধু মিলে শুরু করেছিল দুধ বিক্রি, আজ বার্ষিক ৯০ কোটির টার্নওভার

বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রকারের ফার্মের ব্যবসার উপর মানুষের ঝোঁক অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ব্যবসায়ী উপার্জনের পরিমাণও অনেক বেশি। “ঝাড়খণ্ডে” অবস্থিত ‘ওসাম ডেইরি’ শুধু আমাদের দেশেই নয় বিদেশেও খ্যাতি লাভ করেছে। দিন দিন বেড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে ওসাম ডেইরির নামও রয়েছে। এই কোম্পানিটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি বড় অবস্থান অর্জন করেছে বলে জানা যায়।

কঠোর পরিশ্রম ছাড়া কোন সাফল্য অর্জন করা যায় না। তাই এই কোম্পানির সাফল্যের পিছনে রয়েছে কিছু মানুষের আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রমের ফল। যেনে নেওয়া যাক ‘ওসাম ডেইরি’ কে ‘সাফল্যের মুকুট’ কারা পরিয়েছিলেন এবং কিভাবে?এই বিখ্যাত দুগ্ধ খামারের ব্যবসা শুরুর পিছনে ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের ছেলে “অভিনব শাহ”।

‘অভিনব’ বিদেশে থাকার সময় একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে সি.এ হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু সিএ-র চাকরি করতে গিয়ে তিনি বিরক্ত হয়ে যান। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় অফিসে যাওয়া, সেখানে কাজ করা এবং বিকেল ৫ টায় বাসায় ফেরা।এভাবেই তার জীবন একঘেয়ে হয়ে পড়ে। এবার তিনি ভিন্ন কিছু করার চিন্তা ভাবনা করেন।

তারপর তিনি উদ্যোক্তা জগতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার সাথে কাজ করা আরও কয়েকজন বন্ধুকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানালে তাদের কেউ কেউ তার সাথে অংশীদারিত্বে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরপর অভিনব তার অন্যান্য বন্ধু “অভিষেক রাজ”, “হর্ষ ঠক্কর” এবং “রাকেশ শর্মার” সাথে ২০১২ সালে একটি দুগ্ধ খামার ব্যবসা শুরু করেন।

২০১৪ সালে তিনি এই ব্যবসাটি “ওসাম ডেইরি” নামে নিবন্ধিত করান। অভিনব শাহ ওসাম ডেইরির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই ব্যবসা শুরু করার পেছনের ধারণা হিসেবে তিনিই মূল ব্যাক্তি। বিগত ৯ বছর ধরে ‘লুক্সেমবার্গের’ একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে সি.এ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি অন্যান্য দেশের দুগ্ধ শিল্পের কাজ দেখেছিলেন, যা তাকে এই ব্যবসা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

যখন সে তার ব্যবসার অংশীদারও (বিসনেস পার্টনার) পেল, তখন তার সাহস আরও বেড়ে গেল। এই ব্যবসার জন্য শুধু তিনিই নন তার বন্ধুরাও তাদের চমৎকার চাকরি ছেড়ে ভারতে ফিরে আসেন। ওই চাকরিতে তাদের বার্ষিক প্যাকেজ ছিল প্রায় ৪০ লাখ রুপি। দেশে আসার পর তারা ঝাড়খণ্ডে নিজেদের ডেইরি ফার্মের ব্যবসা শুরু করেন।

প্রথমত, অভিনব এই শিল্পের পুরো কাজের ধরন বুঝতে এবং এটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞানের জন্য ‘কানপুর’ থেকে একটি বাণিজ্যিক দুগ্ধ চাষের কোর্স করেছিলেন। এই প্রশিক্ষণে তারা পশুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়েছেন। পরবর্তীতে এই চার বন্ধু মিলে ১-১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এভাবে ব্যবসায় মোট চার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছিল। তারপর এই টাকা দিয়ে প্রথমে ১ একর জমি কেনেন এবং ডেইরি ফার্ম তৈরিতেও প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করেন। জানা যায় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরই তিনি পাঞ্জাবে যান এবং সেখান থেকে ৪০টি গরু কেনেন, তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা।

ডেইরি ব্যবসা শুরু করার সময়, অভিনব এবং তার বন্ধুরাও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। তিনি যখন এই ডেইরি প্ল্যান্ট খোলার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তার জন্য ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন ছিল। যদিও এটি তার জন্য একটি বড় সমস্যা কারণ। কিন্তু বেশ কয়েকদিনের পরিশ্রমের পর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৭ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিলেন।

ব্যবসা শুরু করার এক মাসও পার হয়নি তার ২৬ টি গরু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলো। এ শিল্পে তাদের অভিজ্ঞতা ছিল না, যার কারণে ওই সব অংশীদারদের গরু মারা যাওয়ায় অনেক ক্ষতি বহন করতে হয়েছিল তখন। শুধু তাই নয়, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি থেকে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসা এই যুবকদের গরুর লাশ নিজেরাই তুলতে হয়েছে এবং বেশ কয়েকদিন নিজেরাই গোবর পরিষ্কার করেছিলেন, কিন্তু তারা হাল ছাড়েননি।

পরবর্তীতে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা এই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আরও তথ্য নিয়ে কাজ করবেন । এরপর বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে ব্যবসার জন্য ৫০ লাখ টাকায় ১০০ টি “হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান” গরু কিনেছিলেন। যার জন্য তাদের বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তাদের বিনিয়োগ ছিল অংশীদার প্রতি প্রায় ১.৫ কোটি টাকা।

যদিও এই ব্যবসায় এত টাকা বিনিয়োগ করা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু তারা তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল পেয়েছে। গ্রাহকরা তাদের পণ্য পছন্দ করায় তাদের পণ্যের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এরপর ৬ মাসের মধ্যে তারা লাভবান হতে শুরু করেন। তাদের ব্যবসা বাড়তে শুরু করার সাথে সাথে স্থানীয় গুন্ডারা(মাস্তান)তাদের অনেক হয়রানি করিয়েছিলো। কিন্তু অভিনব ও তার বন্ধুরা গুন্ডাদের মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

About admin

Check Also

২০০ বছর বয়স, এখনো কয়েকশো ফল দেয় এই কাঁঠাল গাছ

পানরুটি শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরেই মালিগামপাট্টু নামক গ্রামে রয়েছে একটি ঐতিহ্যবাহী কাঁঠাল গাছ। গাছটির বয়স …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *