নিজস্ব প্রতিবেদন:এক বনে ছিল এক সিংহ। ইহা বড় দেখতে। অনেক দুষ্ট। বনের ছোট পশুদের দেখতে পেলেই সে হত্যা করত। মজা করে তাদের মাংস খেত। হরিণের মাংস তার প্রিয়। সারাদিন নিরীহ পশুদের শিকার করে সিংহটি বেশ মজা পেত। অন্যদিকে এটা নিয়ে বনের সব পশু খুব ভয়ে থাকত।একদিন হরিণ, খরগোশ আর অন্যান্য প্রাণী মিলে হাজির হল চালাক শেয়াল মামার কাছে। শেয়াল মামা থাকত একটা পুরাতন কুয়োর পাশে। জামগাছের তলে। কুয়োটা ছিল লতাপাতায় ঘেরা।
কিন্তু কেউ তা সহজে বুঝতে পারত না। বুদ্ধি করে সেখানেই থাকত চালাক শেয়ালটা। সিংহ এই পথে আসে না। এটা ভেবেই শেয়ালটা এখানে থাকত। কারণ শেয়ালটা ছিল সিংহের দুই চোখের বিষ।সে জানত, সিংহের সামনে একবার পড়লেই রক্ষা নেই। এর আগে বনের পাজি একমাত্র সিংহীকে তো এই শেয়ালটাই বুদ্ধি করে মেরেছে। সিংহ এটা না জানলেও শেয়ালকে ঠিকই সে সন্দেহ করে। শেয়ালও বোঝে। তাই ভয়ে ভয়ে দূরে থাকে। অনেক দিন পর আজ বনের প্রাণীদের একসঙ্গে দেখে শেয়ালের খুব ভালো লাগে।
বনের প্রাণীরাও শেয়ালকে দেখে খুশি হয়। শেয়ালকে ভয়ের কথা খুলে বলে। সব শুনে শেয়াল বলে, হুম। আমিও তো সিংহের ভয়ে এখানে লুকিয়ে থাকি। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। আচ্ছা, তোমরা সবাই এই পুরাতন কুয়োর উত্তর পাশেই থাকো। আমি একটু আসছি।এই বলে শেয়ালটা কোথায় যেন চলে যায়। কিন্তু কোথায় গেল তা কাউকেই বলল না। শেয়ালের এমন কা- দেখে বনের পশুরা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর শেয়াল পৌঁছাল সিংহের আস্তানায়। সিংহ তাকে দেখেই হুঙ্কার ছাড়ল।
এতদিন পর পুরনো শত্রুকে দেখে হত্যার জন্য সিংহটি দৌড়ে এল। সিংহের এমন আক্রোশ দেখে শেয়াল ভয়ে ভয়ে বলল, হুজুর, আপনি বনের রাজা। তাই আপনি আমারও রাজা। আপনি যা ইচ্ছে করতে পারেন। ভুল হলে মেরে ফেলতে পারেন। কিন্তু আমাকে মেরে ফেলার আগে একটা কথা বলতে চাই। যারা সত্যি সত্যি আপনার ক্ষতি চায়, হত্যা করতে চায়, তাদের খবরটা বলতে চাই। আমি এই কারণেই এতদিন পর এখানে এসেছি। ভুল বুঝবেন না। আর আপনার সঙ্গী সিংহীকে আমি মারিনি।
যারা আজ আপনাকে মারার বুদ্ধি আঁটছে তারাই সিংহীকে মেরেছে।শেয়ালের এমন কথা শুনে সিংহ বলল, এত বড় কথা। আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করে কে! কার এত বড় বুকের পাটা! এমন কথা শুনে সিংহকে শেয়াল বলে, যারা আপনাকে মারতে চায় তারা বনের গভীরে আছে। যেখানে জামগাছ আছে, ওখানে। জামগাছের কথা শুনেই সিংহটা চমকে ওঠে। ওখানে গিয়ে যে তার একমাত্র সঙ্গী আর ফেরেনি! তবুও শেয়ালের কথা শুনে সেখানে যেতে চাইল। শত্রু নিধনে। এরপর শেয়ালের সঙ্গে ওই জামগাছের কাছাকাছি গেল সিংহ।
দূর থেকে পাতার আড়ালে লুকানো বনের পশুদের দেখিয়ে শেয়াল সিংহকে বলল, ওই যে ওরাই বসে বসে আপনাকে হত্যার চক্রান্ত করছে। শেয়ালের এমন আচরণ টের পেল বনের প্রাণীরা। তারা দূর থেকে শেয়ালকে অভিশাপ দিতে লাগল। সিংহকে দেখে কেউ কেউ পালাতে লাগল। অমনি সিংহ পেছন থেকে দৌড় দিল। লতাপাতা ঠেলে একটু সামনে যেতেই সিংহটি পড়ে গেল পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা পুরনো গভীর কুয়ায়। বুঝতে পারল শেয়ালের আসল উদ্দেশ্য। শেয়াল কুয়োর কাছে এসে বলল, বোকা সিংহ।
আমি এভাবেই তোমার সঙ্গীকে মেরেছিলাম। আজ তুমি মরো।সিংহকে কুয়োর মধ্যে দেখে বনের অন্য প্রাণীরাও খুব খুশি হল। তারা সবাই মিলে শেয়ালকে বাহ্বা দিল। প্রাণীরা বুঝতে পারল তাদের রাজা যে হবে, তার বুদ্ধি এমনই হওয়া প্রয়োজন। সুখে-দুখে যে কাছে থাকবে তাকেই রাজা হওয়া মানায়। সবাই মিলে বুদ্ধিমান শেয়ালকেই বনের রাজা বানাল। সেই থেকে ওই বনে শেয়ালই রাজা ছিল।