‘ঝামেলা’ কেনাবেচা করে মাসে আয় লাখ টাকার উপরে..

মানুষ স্বভাবতই ঝামেলা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন। তবে এমন একজন আছেন যিনি ঝামেলা কেনাবেচা করেন। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে তিনি প্রতি মাসে আয় করেন প্রায় লাখ টাকা। ২১ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন, দিন কাটাচ্ছেন সুখে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলেও ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে ময়মনসিংহ শহরে। যার মালিক সায়েম আহমেদ। যেখানে পুরাতন ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটারসহ ঘরের আসবাবপত্র কেনাবেচা হয়।

অনেক জায়গাতেই পুরাতন আসবাবপত্র হরহামেশা কেনাবেচা হলেও সায়েম আহমেদ তার প্রতিষ্ঠানের নাম কেন ‘ঝামেলা কিনি’ রাখলেন সেই উত্তর জানা গেল তার মুখেই। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের নামের বিষয়ে দুই থেকে তিন মাস চিন্তা-ভাবনা করি। এক সময় মনে হলো যখন বাসার জন্য নতুন কোনো আসবাবপত্র কেনা হয় তখন পুরোনো আসবাবপত্র বাসার জন্য ঝামেলা হয়ে দাঁড়ায়।

আর এগুলো মানুষের কাছে যেহেতু ঝামেলা মনে হয় এবং সেগুলো আমি কিনব। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম প্রতিষ্ঠানের নাম দেবো ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি’। এরপর এই নামেই প্রচারণা শুরু করি এবং বিভিন্ন স্থান থেকে পুরোনো আসবাবপত্র কিনে সেগুলোকে মেরামতের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করে পুনরায় বিক্রি করি।

ডিগ্রি প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায় সায়েম আহমেদ তার বাবাকে হারান। এরপর অভাব অনটনের সংসারে আর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এক পর্যায়ে ২০০০ সালে বলাশপুর মরাখলা এলাকার বাকৃবি সড়কে স্বল্প পুঁজি নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। সততা আর আস্থা বজায় রাখায় এতদিনে বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছেন তিনি।

সায়েম বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে একটি ব্যবসা করার জন্য মনস্থির করি। কিন্তু আমার কাছে তেমন টাকা-পয়সা ছিল না। ভাবতে থাকলাম কী করা যায়। তখন দেখলাম অনেক মানুষ ফার্নিচার পরিবর্তন করে। সেক্ষেত্রে আমি এই সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করলাম এবং কম পয়সায় সেগুলো কিনে তা মেরামত করে একটু বেশি দামে বিক্রির চিন্তা করি। তারপর এটি শুরু করে প্রচার-প্রচারণা চালানোর পর আমি ভালো সাড়া পাই। আস্তে আস্তে এর মাধ্যমে লাভবান হতে শুরু করি এবং আল্লাহর রহমতে পরিবারে সচ্ছতা ফিরে আসে।

শুরুতে তিনি একা কাজ করলেও ব্যবসার প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়েছেন কর্মচারীও। বর্তমানে তার দোকানে নিয়মিত ৭-৮ কর্মচারী কাজ করেন। তাদের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে দৈনিক সায়েম অন্তত ৩০ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি করেন। আর প্রতি মাসে তার আয় হয় প্রায় এক লাখ টাকা। ঝামেলা কিনি নাম দিয়ে সায়েম আহমেদেরও যে ঝামেলা পোহাতে হয়নি তা কিন্তু নয়। প্রতিষ্ঠানের এমন নামের ভিন্নতার ফলে শুরুতে তৎকালীন পৌরসভা থেকে প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স পেতে বেশ বেগ পেতে হয় তাকে।

সায়েম আহমেদ বলেন, এই নামটি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করতে পারছিলাম না। তবে আমি যেহেতু অনেক প্রশাসনিক ব্যক্তিদের বাসার পুরাতন আসবাবপত্র কিনতাম সেই সুবাদে তাদের সুপারিশে ট্রেড লাইসেন্সটি এই নামেই পেয়ে যাই। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি ২১ বছর ধরে সগৌরবে চলছে।

About admin

Check Also

টকশোতে উপস্থাপককে বুবলীর নায়কের মারধর! তুমুল ভাইরাল ভিডিও

শনিবার রাত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যায়, ক্যামেরার সামনে মারামারিতে জড়িয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *